হিন্দু ধর্মের প্রচলিত প্রধান ধর্মীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হল পুরীধাম ( জগন্নাথদেবের মন্দির ) । পুরীর জগন্নাথ মন্দির হল বিষ্ণুর চারধামের অন্যতম। বাকি তিন ধাম হল বদ্রীনাথ, দ্বারকা ও রামেশ্বরম। মনে করা হয় দ্বারকার শ্রীকৃষ্ণই পুরীতে জগন্নাথদেব রূপে অবস্থান
করছেন। পুরীর একমাত্র প্রধান ধর্মীয় উত্সব রথযাত্রা। রথের দিন তিনটি পৃথক রথ সাজিয়ে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। আর এই রথযাত্রা দেখতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী পুরীতে ভিড় জমান । আমাদের প্রতিবেশি রাজ্য ওডিশার প্রধান উত্সব হলেও রথযাত্রা ঘিরে যথেষ্ট উন্মাদনা রয়েছে প্রত্যেক বাঙালির মধ্যেও।
রথের রশি স্পর্শ করা
যে রথে চড়ে জগন্নাথদেব তার মাসির বাড়ি যান, তার নাম নন্দীঘোষ, বলরাম বা বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ এবং সুভদ্রার রথের নাম দেবদলন বা পদ্মধ্বজ। প্রায় প্রত্যেক ভক্তদের মনে প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে রথের রশি একবার ছুঁতে পারলেও পূণ্যলাভ সম্ভব । সেই কারণে রথের রশি একটিবার স্পর্শ করতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ভক্তদের মধ্যে। শুধু তাই নয় কেবলমাত্র একটিবার রথের রশি স্পর্শ করতেই প্রতি বছর বহু মানুষ রথের সময় পুরী যান। কিন্তু কেন রথের দড়ি একবার স্পর্শ করতে মানুষের মনে এত আকুলতা, তা জানেন কি ? আর না জেনে থাকলে জেনে নিন।
প্রচলিত হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুসারে জগন্নাথদেবের রথ হল স্বয়ং দেবতার মূর্ত প্রতীক। তাই রথের সামনে রাস্তার উপরেই সাষ্টাঙ্গে লুটিয়ে পড়ে প্রণাম করেন বহু মানুষ। বছরে একবারই ভক্তদের দর্শন দেওয়ার জন্য ঈশ্বর স্বয়ং মন্দিরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। আর এই সময় একবার তার দড়ি স্পর্শ করতেই সর্বত্রই ব্যাকুল থাকেন ভক্তরা।
সকল ভক্তদের মনের বিশ্বাস যে রথের রশি একবার স্পর্শ করলে সমস্ত পাপ যেমন মুছে যায় তেমনি জন্ম মৃত্যুর শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অর্থাত্ মনে করা হয়, যে ব্যক্তি রথের দড়ি টানার সুযোগ পান, তাঁকে পুর্নজন্মের কষ্ট পেতে হয় না। এই কারণে কয়ের দশক আগেও ভক্তদের মধ্যে রথের চাকার নীচে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার প্রবণতা দেখা মিলেছে । তবে বর্তমান সময়ে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে প্রশাসন নানান ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে ।