উপনিষদ এবং গীতা হিন্দু ধর্মের অমূল্য গ্রন্থ। গীতার মাধ্যমে কৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে যে জ্ঞান প্রদান করেছিলেন, তা জীবনের প্রতি সমস্যা মোকাবিলা এবং সাফল্য লাভের জন্য একটি পথনির্দেশ। গীতার এই ৮টি বাণী সব যুগের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং মানব জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে।
১. জন্ম ও মৃত্যু: শোকের কারণ নয়
গীতায় বলা হয়েছে, “না কেউ মরে, না কেউ মারে, সব কিছুই নিমিত্ত মাত্র… জন্মের পূর্বে কারো শরীর ছিল না, মৃত্যুর পরও শরীর থাকবে না। এদের মধ্যবর্তী সময়কালে শরীর থাকে, তাই এই জন্য কেন শোক পালন করো?” অর্থাৎ, শোক করা উচিত নয়, কারণ শরীরের পরিবর্তনই প্রকৃতির একটি অংশ।
২. আত্মার অমরত্ব
“আত্মাকে না অস্ত্র কাটতে পারে, না আগুন পোড়াতে পারে, জল ভেজাতে পারে না, আবার হাওয়া তাকে শুকাতে পারে না।” আত্মা অমর এবং অবিনশ্বর, যা কোনো প্রকার ধ্বংসের আওতায় আসে না।
৩. মৃত্যু ও অমৃতের চিন্তা
কৃষ্ণ বলেছিলেন, “হে অর্জুন! যাদের প্রাণ চলে গিয়েছে তাদের জন্য শোক করা অর্থহীন। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, একটি প্রক্রিয়া। মৃত্যুর পরিবর্তে অমৃতের চিন্তা করা উচিত।”
৪. কর্মের প্রতি মনোযোগ
“কর্মের ওপরই তোমার অধিকার রয়েছে, কর্মের ফলের ওপর নয়। তাই ফল লাভের আশায় কর্ম করো না। নিজের মন নিয়ন্ত্রণে রাখো এবং কর্মযোগী হও।” কর্মের প্রতি একাগ্রতা এবং ফলের চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।
৫. রাগ ও স্মৃতিভ্রম
“রাগের কারণে স্মৃতিভ্রম ঘটে, যার ফলে বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়। বুদ্ধিভ্রষ্ট হলে নিজের ক্ষতি হয়।” রাগ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, কারণ এটি আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে প্রভাবিত করে।
৬. শরণাগতি ও পাপমুক্তি
“হে অর্জুন! সমস্ত ধর্ম ত্যাগ করে শুধু আমার শরণে এসো। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করে দেব। মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান হারানো, তারা আমাকে স্মরণ করে না। অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরাও শেষ পর্যন্ত আমাকেই লাভ করেন।”
আরও পড়ুন > জানেন কি ? একটা তামার পাত্রই আপনার ভাগ্য ফেরাতে পারে! জানুন উপায় …
৭. কাম, ক্রোধ ও লোভ: নরকের দ্বার
“কাম, ক্রোধ ও লোভ তিনটি নরকের দ্বার। এগুলো আত্মাকে ধ্বংস করে এবং অধোগতির দিকে নিয়ে যায়।” এই তিনটি মানব জীবনের জন্য বিপজ্জনক এবং ত্যাগযোগ্য।
৮. যুদ্ধ ও ধ্বংস
গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন, “আমি সমস্ত লোক ধ্বংসকারী মহাকাল। তুমি যদি যুদ্ধ না করো, তবুও এই সেনারা ধ্বংস হবে।” অর্থাৎ, যুদ্ধের ফল অবশ্যম্ভাবী এবং এতে অংশগ্রহণ না করা হলেও ধ্বংস আটকানো সম্ভব নয়।
এই গীতার শিক্ষা আপনাকে জীবনযুদ্ধের নানা দিক সম্পর্কে সচেতন করবে এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে সঠিক পথে চলার সাহস প্রদান করবে।