উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত কর্ণপ্রয়াগ হল অলকানন্দা নদীর পঞ্চপ্রয়াগের অন্যতম একটি অংশ।
অলকানন্দা ও পিণ্ডার নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই স্থানের বিশেষ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, মহাভারতের মহাবীর কর্ণের শেষকৃত্য এখানে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ সম্পন্ন করেছিলেন।
কর্ণপ্রয়াগের নামকরণ এবং বিশ্বাস
কর্ণপ্রয়াগের নাম কর্ণের সাথে যুক্ত। এক বিশ্বাস অনুযায়ী, কর্ণ এখানেই পিতা সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে তপস্যা করেছিলেন, আর সেই কারণে এই স্থানটির নাম হয়েছে কর্ণপ্রয়াগ। এখানে কর্ণের একটি মন্দিরও রয়েছে। অলকানন্দার পঞ্চপ্রয়াগের মধ্যে কর্ণপ্রয়াগ ছাড়াও বিষ্ণুপ্রয়াগ, নন্দপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ এবং দেবপ্রয়াগ অন্তর্ভুক্ত।
গ্রামবাসীদের কর্ণের আদর্শ
কর্ণ, যিনি মহাভারতে একজন মহান দানবীর হিসেবে পরিচিত, কখনোই কারো সাহায্য প্রার্থনা ফিরিয়ে দিতেন না। কর্ণের আদর্শ অনুসরণ করে, কর্ণপ্রয়াগের গ্রামবাসীরা নিজেদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দেশ অনুযায়ী, গোটা গ্রামে পণপ্রথা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো পণ গ্রহণ বা প্রদান করা হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, গ্রামে পূর্বে পশুবলি দেওয়ার প্রথা থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ করা হয়েছে।
কৃষ্ণ এবং কর্ণের ঐতিহাসিক ঘটনা
মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়ে অর্জুন কোনোভাবেই কর্ণকে পরাজিত করতে পারছিলেন না। কৃষ্ণ জানান যে কর্ণের পূণ্যফল এত বিশাল যে, তা না নিলে তাঁকে হত্যা করা সম্ভব নয়। তাই কৃষ্ণ নিজে ব্রাহ্মণ রূপ ধারণ করে কর্ণের কাছে তাঁর পূণ্যফল প্রার্থনা করতে আসেন। কর্ণ, কৃষ্ণের আসল পরিচয় বুঝতে পেরেও, তাঁকে কোনো কিছু ছাড়াই ফেরান না এবং সকল পূণ্যফল দান করেন।
এরপর, কৃষ্ণ কর্ণকে বিশ্বরূপ দর্শন করান। কর্ণ কৃষ্ণের কাছে অনুরোধ করেন যেন তিনি নিজে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। কৃষ্ণের নির্দেশে অর্জুন কর্ণকে নিরস্ত্র করে হত্যা করেন এবং কর্ণপ্রয়াগে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
উত্তরকাশীর নেতওয়ার গ্রামে কর্ণের পূজা
বর্তমানে, উত্তরকাশীর রুদ্রপ্রয়াগ জেলার নেতওয়ার গ্রামে মহাধূমধামে কর্ণকে পূজিত করা হয়। গ্রামবাসীরা কর্ণের আদর্শ অনুসরণ করে এবং তাঁর স্মৃতি রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন।